![]() |
ডায়াবেটিস এখন একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে |
ডায়াবেটিস—আমাদের সমাজে এখন এক পরিচিত নাম। বাংলায় একে বহুমূত্র রোগ বলা হয়। এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা শরীরের কোষগুলো ইনসুলিন সঠিকভাবে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, এবং নিয়ন্ত্রণে না আনলে এটি কিডনি, চোখ, হৃদপিণ্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন ডায়াবেটিসের প্রাথমিক ও পরবর্তী লক্ষণ, এর কারণ, প্রকারভেদ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
ডায়াবেটিস কী?
সহজ ভাষায় বললে, ডায়াবেটিস এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে ইনসুলিন নামক হরমোনের ঘাটতির কারণে গ্লুকোজ (চিনির উপাদান) রক্তে জমা হয়ে যায়। সাধারণভাবে ইনসুলিন আমাদের রক্তের শর্করাকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে, যেখানে এটি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ইনসুলিন যদি কম উৎপন্ন হয় বা শরীর সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে না পারে, তখন রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমে থাকে, যা ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডায়াবেটিসের ধরণসমূহ
ডায়াবেটিস মূলত কয়েক ধরনের হয়ে থাকে এবং প্রতিটি ধরনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও চিকিৎসার পদ্ধতি রয়েছে।
১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস
টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়। এটি একটি অটোইমিউন সমস্যা, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজেই অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন-উৎপাদক কোষ ধ্বংস করে ফেলে। ফলে রোগীকে প্রতিদিন ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। এই ধরনের ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই প্রকট হতে পারে।
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস
এই ধরনের ডায়াবেটিস মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা গেলেও বর্তমানে তরুণদের মধ্যেও এটি বাড়ছে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলিন উৎপাদনে ঘাটতির কারণে এটি হয়। নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা এবং ওষুধের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়।
৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় কিছু মহিলার মধ্যে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে, যা প্রসবের পর সাধারণত সেরে যায়। তবে এদের ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সময় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা প্রয়োজন।
৪. প্রিডায়াবেটিস
এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেও এখনও ডায়াবেটিস ধরা পড়ে না। তবে সময়মতো সচেতন না হলে এটি পূর্ণাঙ্গ ডায়াবেটিসে রূপ নিতে পারে। প্রিডায়াবেটিস শনাক্ত হলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ কি কি?
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো কিন্তু একেকজনের শরীরে একেক রকম হতে পারে, আর এটা ডায়াবেটিসের ধরনের উপরও নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ এবং প্রাথমিক লক্ষণ আছে, যেগুলো আমাদের সকলেরই চিনে রাখা উচিত।
সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণ
অতিরিক্ত পিপাসা ও বারবার প্রস্রাব: যখন আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, তখন আমাদের কিডনি সেই বাড়তি শর্করাকে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বেশি বেশি কাজ করতে শুরু করে। এর ফলে আমাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসে, আর শরীর থেকে জল বেরিয়ে যাওয়ায় আমরা খুব বেশি তৃষ্ণার্ত বোধ করি। এটা ডায়াবেটিসের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক লক্ষণ।
![]() |
খাবার খাওয়ার পরেও ক্ষুধা অনুভব করা |
বারবার ক্ষুধা লাগা: আমাদের শরীরে যখন ইনসুলিনের অভাব হয়, অথবা ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন আমাদের শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ পায় না। ফলে আমাদের শরীর বারবার ক্ষুধার সংকেত পাঠাতে থাকে, এমনকি আমরা খাবার খাওয়ার পরেও ক্ষুধা অনুভব করি। এটাও ডায়াবেটিসের একটা লক্ষণ।
ওজন কমে যাওয়া: বিশেষ করে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যেতে পারে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসেও অনেক সময় এমনটা দেখা যায়। এর কারণ হলো শরীর যখন গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না, তখন সে শক্তি তৈরির জন্য ফ্যাট এবং প্রোটিন ভাঙতে শুরু করে, যার ফলে ওজন কমতে থাকে।
![]() |
ডায়াবেটিসের ফলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি সাময়িকভাবে ঝাপসা হয়ে যায় |
দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে আমাদের চোখের লেন্সের আকার পরিবর্তন হতে পারে, যার ফলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি সাময়িকভাবে ঝাপসা হয়ে যায়। এটা ডায়াবেটিসের একটা পরিচিত লক্ষণ।
![]() |
ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই দুর্বল এবং ক্লান্ত অনুভব করেন। |
ক্লান্তিভাব: শরীরে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি তৈরি হয় না, তখন ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই দুর্বল এবং ক্লান্ত অনুভব করেন। খাবার খাওয়ার পরেও যদি আপনি খুব ক্লান্ত বোধ করেন, তবে এটা ডায়াবেটিসের একটা লক্ষণ হতে পারে।
টাইপ অনুযায়ী লক্ষণগত পার্থক্য
টাইপ ১ ডায়াবেটিসে লক্ষণগুলো হঠাৎ করে দেখা যায়, যেমন দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, অতিরিক্ত প্রস্রাব এবং অস্বাভাবিক তৃষ্ণা। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারেন না। ক্লান্তি, সামান্য ঝাপসা দৃষ্টি বা ত্বকের সংক্রমণ এর প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে।
ডায়াবেটিসের কারণসমূহ
ডায়াবেটিস হওয়ার পেছনে অনেক কারণ জড়িত, আর এই কারণগুলো ডায়াবেটিসের প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে আলাদা হতে পারে।
১. বংশগত কারণ
যদি আপনার পরিবারের সরাসরি কারো ডায়াবেটিস থাকে, তবে আপনারও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। জিনগত প্রবণতা টাইপ ১ এবং টাইপ ২ উভয় ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত মিষ্টি ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, স্থূলতা, ধূমপান এবং নিয়মিত শরীরচর্চার অভাব টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ। একটি অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের দিকে ধাবিত করে।
৩. মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব
দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
কাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
- যাদের বয়স ৪৫ বছর বা তার বেশি।
- যারা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন।
- যাদের পরিবারের ইতিহাসে ডায়াবেটিস রয়েছে।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে।
- যেসব নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে।
- যারা অনিয়মিত ও অলস জীবনযাপন করেন।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণ
- অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে তোলে, কারণ মেদবহুল কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়।
- উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- ধূমপান: ধূমপান শুধু ফুসফুসের জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর ডায়েট: চিনি এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ওজন বাড়ে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
ডায়াবেটিস নির্ণয়ের উপায়
সঠিক সময়ে ডায়াবেটিস নির্ণয় করা রোগের জটিলতা এড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. ফাস্টিং ব্লাড সুগার টেস্ট
৮-১০ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। যদি এই মাত্রা ১২৬ mg/dL বা তার বেশি হয়, তবে ডায়াবেটিস হিসেবে গণ্য করা হয়।
২. HbA1c টেস্ট
এই পরীক্ষা গত ২-৩ মাসের গড় রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ণয় করে। HbA1c এর মাত্রা ৬.৫% বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
৩. ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT)
খালি পেটে রক্তের শর্করা মাপার পর রোগীকে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ মেশানো পানি পান করতে দেওয়া হয় এবং ২ ঘণ্টা পর পুনরায় রক্তের শর্করা মাপা হয়। ২ ঘণ্টা পরের রিডিং ২০০ mg/dL বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস হিসেবে ধরা হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়ে এই পরীক্ষা বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাভাবিক রক্তে শর্করার মান
- খালি পেটে: ৭০–৯৯ mg/dL
- খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর: ১৪০ mg/dL এর নিচে
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা
ডায়াবেটিসের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখা এবং জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করা।
১. ওষুধ ও ইনসুলিন
চিকিৎসক রোগীর ডায়াবেটিসের ধরন এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ইনসুলিন ইনজেকশন বা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ইনসুলিন অপরিহার্য।
২. জীবনধারা পরিবর্তন
নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জীবনযাত্রার সঠিক পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজনীয়তাও কমাতে পারে।
৩. নিয়মিত চেকআপ
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা অপরিহার্য। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা এবং তার চিকিৎসা করা সম্ভব।
প্রতিরোধের উপায়
ডায়াবেটিস একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। কিছু সহজ পদক্ষেপের মাধ্যমে এর ঝুঁকি কমানো যায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম, যেমন দ্রুত হাঁটা, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
- তাজা সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান: ফল, সবজি এবং শস্যজাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- মিষ্টি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন: এই ধরনের খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ।
- মানসিক চাপ কমান ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন: পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।
FAQ (প্রশ্নোত্তর)
প্রশ্ন: ডায়াবেটিস কি পুরোপুরি ভালো হয়?
উত্তর: টাইপ ১ ডায়াবেটিস পুরোপুরি ভালো না হলেও, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, তবে পুরোপুরি নিরাময় হওয়া কঠিন।
প্রশ্ন: ডায়াবেটিস হলে কি ফল খাওয়া যাবে না?
উত্তর: সব ফল নয়, তবে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত ফল, যেমন আপেল, পেয়ারা, জাম্বুরা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি ফল এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: প্রিডায়াবেটিস মানেই কি ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হবে?
উত্তর: না, প্রিডায়াবেটিস শনাক্ত হলে সচেতন জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।
ডায়াবেটিসের জটিলতা
যদি ডায়াবেটিস দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায়, তবে শরীরে অনেক ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কিডনি সমস্যা: উচ্চ রক্তে শর্করা কিডনির ছোট ছোট রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি নামে পরিচিত এবং শেষ পর্যায়ে কিডনি সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক: ডায়াবেটিস রক্তনালীগুলোকে শক্ত ও সরু করে ফেলে, যার ফলে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
চোখের সমস্যা: ডায়াবেটিস চোখের রেটিনার রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামে পরিচিত এবং অন্ধত্ব পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
স্নায়ু ক্ষয়: উচ্চ শর্করা স্নায়ুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত এবং এর ফলে ব্যথা, অসাড়তা এবং অন্যান্য অস্বাভাবিক অনুভূতি হতে পারে, বিশেষ করে হাত ও পায়ে।
পা কাটা পর্যন্ত গড়াতে পারে: স্নায়ু ক্ষয় এবং পায়ে রক্ত সরবরাহের অভাবে ছোটখাটো আঘাত বা সংক্রমণও সহজে সারে না এবং মারাত্মক রূপ নিতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, সংক্রমণ এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে শেষ পর্যন্ত পা কেটে ফেলতে হয়।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
যদি আপনি ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনুভব করেন, যেমন ঘন ঘন প্রস্রাব, খুব বেশি তৃষ্ণা লাগা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়াও, যদি আপনার রক্ত পরীক্ষায় উচ্চ শর্করা ধরা পড়ে অথবা ডায়াবেটিসের চিকিৎসা চলাকালীন কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয় বা ওষুধে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
সারাংশ
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে উপেক্ষা করলে এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। সঠিক জ্ঞান, সচেতনতা, নিয়মিত চিকিৎসা এবং জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই এই রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন, লক্ষণ চিনে নিন, এবং নিজের স্বাস্থ্য রক্ষা করুন।
আরও যা পড়তে পারেন
- আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ৭টি কার্যকর কৌশল
- মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা
- মনের প্রশান্তির জন্য কিছু সহজ অভ্যাস