![]() |
ডায়াবেটিস শুধুমাত্র একটি রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা নয়; বরং এটি একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা। |
ভূমিকা
বর্তমান যুগে ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক রোগে পরিণত হয়েছে, যা সারা বিশ্বে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশেও এর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস শুধুমাত্র একটি রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা নয়; বরং এটি একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা, যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন—চোখ, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র এবং হৃদযন্ত্রকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই রোগটি কেন হয়, কীভাবে শরীরে এটি বিকাশ লাভ করে এবং কী ধরনের প্রতিকার গ্রহণ করলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়—এই সবকিছুর ওপর নির্ভর করে একজন ডায়াবেটিস রোগীর সুস্থ জীবনযাপন। তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সচেতন হওয়া আরও বেশি জরুরি।
এই প্রবন্ধে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করবো—ডায়াবেটিস কী, এটি কেন হয়, এর প্রকারভেদ, লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকারের কার্যকর উপায়সমূহ নিয়ে, যা একজন পাঠককে সম্পূর্ণরূপে এই রোগ সম্পর্কে অবগত হতে সাহায্য করবে।
ডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিস (Diabetes Mellitus) হলো এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা, যার ফলে শরীরে রক্তের গ্লুকোজ বা চিনির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। সাধারণত আমাদের শরীর ইনসুলিন নামক একটি হরমোনের মাধ্যমে রক্তে থাকা গ্লুকোজকে কোষে পৌঁছে দিয়ে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে হয় অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না, অথবা শরীর সেই ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে গ্লুকোজ রক্তে জমা হতে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে তা বিভিন্ন জটিল রোগের জন্ম দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, ডায়াবেটিস বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ না দেখালেও, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সচেতনতার অভাবে রোগটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ও ইনসুলিনের ভূমিকা
আমাদের শরীরে শর্করা বা গ্লুকোজ হলো প্রধান শক্তি উৎস। আমরা যে খাবার গ্রহণ করি, তা ভেঙে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় এবং রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। তবে এই গ্লুকোজকে কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে ইনসুলিন নামক একটি হরমোনের প্রয়োজন হয়। ইনসুলিন মূলত অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এবং এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। যখন শরীরে ইনসুলিনের অভাব দেখা দেয় অথবা কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এই পরিস্থিতিই ডায়াবেটিস নামে পরিচিত।
ডায়াবেটিস কীভাবে শরীরকে প্রভাবিত করে
দীর্ঘদিন ধরে রক্তে উচ্চ মাত্রার গ্লুকোজ বজায় থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হৃদরোগ, কিডনি, চোখ এবং স্নায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে পায়ের রক্তনালী ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে পা কেটে ফেলার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।
ডায়াবেটিস কেন হয়?
বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। মূলত ইনসুলিন হরমোনের অভাব বা এর কার্যকারিতা কমে যাওয়াই প্রধান কারণ। তবে এর পেছনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক কাজ করে।
ইনসুলিন হরমোনের ঘাটতি বা প্রতিরোধ
শরীরে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন কোষ কর্তৃক সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না, তখনই ডায়াবেটিস রোগের সূত্রপাত ঘটে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় একেবারেই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও কোষগুলো সেই ইনসুলিনের প্রতি আর সংবেদনশীল থাকে না, যাকে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স বলা হয়।
বংশগত প্রভাব
পারিবারিক ইতিহাস ডায়াবেটিস হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি পরিবারের নিকটাত্মীয় যেমন বাবা, মা, ভাই বা বোনের ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে অন্যদেরও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। জিনগত কারণে অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা বা ইনসুলিনের প্রতি কোষের সংবেদনশীলতা প্রভাবিত হতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস
বর্তমান যুগে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ভুল খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণের প্রবণতা রক্তে শর্করার মাত্রাকে দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। এর পাশাপাশি, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, যা পরবর্তীতে ডায়াবেটিসের দিকে ধাবিত করে।
![]() |
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের একটি বড় কারণ |
মানসিক চাপ ও স্থূলতা
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের হরমোন balance-এ পরিবর্তন আনতে পারে, লিনের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও, স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের একটি বড় কারণ। অতিরিক্ত মেদ ইনসুলিনের কার্যকারিতাকে বাধা দেয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো জরুরি। এ বিষয়ে আরও জানতে আমাদের "মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা" আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস কেন হয়?
টাইপ ১ ডায়াবেটিস মূলত একটি অটোইমিউন রোগ। এই ক্ষেত্রে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। এর ফলে শরীরে আর ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না।
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া
শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন ভুল করে নিজের শরীরের কোষের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং সেগুলোকে ধ্বংস করতে শুরু করে, তখন তাকে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া বলা হয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়ার কারণেই ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
জেনেটিক ও পারিবারিক ইতিহাস
টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও বংশগত কারণ একটি ভূমিকা রাখে। যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে, তাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। তবে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের তুলনায় এর বংশগত প্রভাব কম।
ভাইরাস সংক্রমণ
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু বিশেষ ভাইরাস সংক্রমণ অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস কেন হয়?
টাইপ ২ ডায়াবেটিস মূলত ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের কারণে হয়। এই অবস্থায় শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও কোষগুলো সেই ইনসুলিনের প্রতি আর সাড়া দেয় না, ফলে রক্তে গ্লুকোজ জমা হতে থাকে।
ইনসুলিন রেজিস্টেন্স
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ হলো ইনসুলিন রেজিস্টেন্স। এর মানে হলো শরীরের কোষ, বিশেষ করে পেশী এবং যকৃতের কোষ, ইনসুলিনের সংকেতের প্রতি আর সংবেদনশীল থাকে না। ফলে, ইনসুলিন রক্ত থেকে গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে।
অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা
অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। যাদের বডি ম্যাস ইনডেক্স (BMI) ২৫-এর উপরে, তাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পেটের মেদ এক্ষেত্রে আরও বেশি বিপজ্জনক।
খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এবং অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ইনসুলিন রেজিস্টেন্স তৈরি করে।
উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল
উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এই দুটি সমস্যা প্রায়শই অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের সাথে সম্পর্কিত।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কেন হয়? (Gestational Diabetes)
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস গর্ভাবস্থায় প্রথম ধরা পড়ে। সাধারণত সন্তান প্রসবের পর এটি সেরে যায়। তবে, এটি মা ও শিশুর জন্য কিছু ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং মায়ের ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
হরমোনজনিত পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। কিছু হরমোন ইনসুলিনের কার্যকারিতাকে বাধা দিতে পারে, যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।
বয়স ও অতিরিক্ত ওজন
৩০ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ এবং গর্ভধারণের আগে অতিরিক্ত ওজন থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পারিবারিক ইতিহাস
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও পারিবারিক ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো কী?
ডায়াবেটিসের লক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং টাইপ ভেদে কিছু পার্থক্য দেখা যায়।
টাইপ ১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ:
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- অতিরিক্ত পিপাসা লাগা
- অল্প সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ:
- চোখে ঝাপসা দেখা
- ক্ষত বা আঘাত সহজে না শুকানো
- বারবার চুলকানি বা ত্বকের সংক্রমণ হওয়া
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের বিশেষ গাইডটি পড়তে পারেন।
ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ কী?
উপরের আলোচনা থেকে আমরা ডায়াবেটিসের কারণ সম্পর্কে জেনেছি। তবে সংক্ষেপে এর প্রধান কারণগুলো হলো:
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
- প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা
কিভাবে বুঝবো আমার ডায়াবেটিস হয়েছে?
যদি আপনার মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা যায়, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
- গ্লুকোমিটারের সাহায্যে ঘরে বসেই রক্তে শর্করার পরিমাণ পরিমাপ করতে পারেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শুধু এর ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা শুরু করা উচিত নয়।
- অতিরিক্ত পিপাসা, বারবার প্রস্রাব, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস অনুভব করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী HbA1c এবং OGTT (Oral Glucose Tolerance Test) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করানো উচিত।
কোন হরমোন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস হয়?
যদিও ইনসুলিনের অভাব বা কার্যকারিতা কমে যাওয়াই ডায়াবেটিসের মূল কারণ, কিছু হরমোনের আধিক্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে ডায়াবেটিস সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
- গ্লুকাগন (Glucagon)
- কর্টিসল (Cortisol)
- গ্রোথ হরমোন (Growth Hormone)
এই হরমোনগুলো সাধারণত স্ট্রেস, অসুস্থতা বা অন্যান্য শারীরিক অবস্থার কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় নিঃসৃত হতে পারে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে।
ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কী কী?
মূলত ডায়াবেটিস তিন প্রকার:
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
এছাড়াও, Monogenic Diabetes-এর মতো বিরল কিছু প্রকারভেদও রয়েছে।
ডায়াবেটিস হলে করব কী?
যদি আপনার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তবে আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা এবং চিকিৎসা শুরু করা উচিত। এর মধ্যে প্রধান হলো:
- নিয়মিতভাবে হালকা ব্যায়াম করা।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- সুষম ও ডায়াবেটিস বান্ধব খাবার নির্বাচন করা।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করা।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে আমাদের বিশেষ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ওজনের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক কী?
স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের একটি প্রধান কারণ। অতিরিক্ত মেদ ইনসুলিন রেজিস্টেন্স বাড়ায়, যার ফলে শরীর আর দক্ষতার সাথে রক্ত থেকে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে না। তাই, ওজন নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের আত্মবিশ্বাস বজায় রেখে ওজন কমানোর জন্য আপনি আমাদের "আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ৭টি কার্যকর কৌশল" আর্টিকেলটি দেখতে পারেন।
ডায়াবেটিস কোন বয়সে হতে পারে?
ডায়াবেটিস যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে, তবে এর প্রকারভেদে বয়সের কিছু পার্থক্য দেখা যায়:
- টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর বৃদ্ধি পায়।
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু ও কিশোর বয়সেই বেশি দেখা যায়।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শুধুমাত্র গর্ভবতী নারীদের মধ্যে দেখা যায়।
কোন কোন কারণে ডায়াবেটিস বাড়ে?
কিছু বিশেষ কারণ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে অথবা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাধা দিতে পারে। এগুলো হলো:
- অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
- নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব
- ধূমপান ও মদ্যপান
কি খেলে ডায়াবেটিস কমে?
যদিও কোনো নির্দিষ্ট খাবার ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে না, তবে কিছু খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে:
- করলা, মেথি ও দারুচিনির মতো প্রাকৃতিক উপাদান
- আঁশযুক্ত খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি ও ব্রাউন রাইস
- কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার
- নিয়মিত ও সময়মতো খাবার গ্রহণ
উপসংহার
ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। সঠিক সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের জটিলতা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখাও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ জন্য "মনের প্রশান্তির জন্য কিছু সহজ অভ্যাস" অনুসরণ করা যেতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
১. ডায়াবেটিসের সাধারণ উপসর্গ কী কী?
– অতিরিক্ত পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
২. ডায়াবেটিসের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর খাবার কোনগুলো?
– প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি ও উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার।
৩. কি ধরনের ব্যায়ামে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে?
– হাঁটা, সাইক্লিং, হালকা জগিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদি।
৪. ডায়াবেটিস কি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য?
– টাইপ ১ ডায়াবেটিস নিরাময়যোগ্য নয়, তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৫. প্রাকৃতিক কোন উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
– করলা, মেথি, দারুচিনি, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে।
৬. কি খেলে ডায়াবেটিস কমে?
– আঁশযুক্ত খাবার, কম GI যুক্ত ফলমূল ও সবজি এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৭. ডায়াবেটিস কোন বয়সে হয়?
– যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে টাইপ ১ সাধারণত শিশুদের এবং টাইপ ২ বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।