![]() |
ডায়াবেটিস আজ বিশ্বজুড়ে একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা |
ডায়াবেটিস আজ বিশ্বজুড়ে একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করছে। এই রোগটি শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণগুলো অস্পষ্ট থাকতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা এড়ানোর জন্য ডায়াবেটিস হলে করণীয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। এই আর্টিকেলে আমরা ডায়াবেটিস হলে কি করতে হবে, কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং সুস্থ জীবনযাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডায়াবেটিস কী এবং কেন হয়?
ডায়াবেটিস হলো একটি বিপাকীয় রোগ, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন হলো অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত একটি হরমোন, যা রক্ত থেকে গ্লুকোজকে শরীরের কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং শক্তি সরবরাহ করে। যখন ইনসুলিনের অভাব হয় বা এটি সঠিকভাবে কাজ না করে, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিস মূলত তিন ধরনের:
- টাইপ-১ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে শরীর আর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা পাম্পের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এটি সাধারণত অল্প বয়সে দেখা যায়।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস: এটি ডায়াবেটিসের সবচেয়ে সাধারণ প্রকার। এই ক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারলেও কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায় (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স)। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অতিরিক্ত ওজন এবং বংশগত কারণ এর প্রধান কারণ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই ধরনের ডায়াবেটিস বেশি দেখা যায়।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: গর্ভাবস্থায় কিছু নারীর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। সাধারণত সন্তান প্রসবের পর এটি সেরে যায়, তবে ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ কীভাবে বুঝবেন?
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন স্পষ্ট নাও হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে যা দেখলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- ঘন প্রস্রাব: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে কিডনি অতিরিক্ত গ্লুকোজ অপসারণের জন্য বেশি কাজ করে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসে।
- অতিরিক্ত পিপাসা: ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে, যার ফলে অতিরিক্ত পিপাসা লাগে।
- ক্ষুধা বৃদ্ধি: শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ না হওয়ায় ক্ষুধা বেড়ে যায়।
- ওজন হ্রাস: পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করা সত্ত্বেও অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের একটি লক্ষণ হতে পারে।
- ঝাপসা দেখা: রক্তে শর্করার মাত্রা পরিবর্তনের কারণে চোখের লেন্সের আকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।
- অন্যান্য লক্ষণ: ক্লান্তি ও দুর্বলতা, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া, ত্বকে সংক্রমণ ইত্যাদিও ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে করণীয় কী?
যদি আপনার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তবে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জটিলতা এড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে:
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি করুন, যেখানে শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটের সঠিক অনুপাত বজায় থাকবে।
- কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবার গ্রহণ: লাল চাল, আটা, সবজি, এবং ফল (যেমন আপেল, পেয়ারা) খান যা ধীরে ধীরে রক্তে শর্করা নিঃসরণ করে।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফল এবং শস্যজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
- ছোট এবং ঘন ঘন খাবার গ্রহণ: দীর্ঘ সময় খালি পেটে না থেকে অল্প পরিমাণে খাবার কয়েকবার খান।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যায়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য মাঝারি ধরণের ব্যায়াম: যেমন দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো।
- সপ্তাহে কয়েকবার শক্তি প্রশিক্ষণ: পেশী তৈরি করা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ব্যায়াম শুরুর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, বিশেষ করে যদি আপনার অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।
রক্তে শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করুন
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার একটি অপরিহার্য অংশ।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত পরীক্ষা করুন: ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS), পোস্টপ্রান্ডিয়াল ব্লাড সুগার (PPBS) এবং HbA1c পরীক্ষা করানো উচিত।
- বাড়িতে গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে নিয়মিত রক্তের শর্করা পরিমাপ করুন এবং এর একটি ডায়েরি রাখুন।
- আপনার ডাক্তারের সাথে নিয়মিত পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার পরিবর্তন করুন।
ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করুন
টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশন অপরিহার্য। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ডাক্তার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা ইনসুলিন প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
- ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক সময়ে এবং সঠিক ডোজে ওষুধ গ্রহণ করুন.
- নিজের ইচ্ছামত ওষুধের ডোজ পরিবর্তন বা বন্ধ করবেন না.
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ডাক্তারকে অবহিত করুন।
![]() |
মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে |
স্ট্রেস ও ঘুম নিয়ন্ত্রণে রাখুন
মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
- স্ট্রেস কমানোর কৌশল অবলম্বন করুন: যোগা, মেডিটেশন বা শখের কাজে সময় দিন।
- একটি নিয়মিত ঘুমের রুটিন তৈরি করুন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে করণীয়
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়লে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং নিয়মিত চেকআপে থাকুন.
- ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করুন.
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করুন.
- রক্তে শর্করার মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন.
- শিশুর স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে ডাক্তারের দেওয়া সকল নির্দেশনা মেনে চলুন.
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, তবে এগুলো কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ বা ওষুধের বিকল্প নয়।
- তেতুল: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে তেতুল রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- করলা: করলার রস বা তরকারি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়।
- মেথি: মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া বা মেথি গুঁড়া গ্রহণ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- লেবু পানি: সকালে খালি পেটে লেবু পানি পান করা হজমের জন্য ভালো এবং রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
- এলাচ ও দারুচিনি: এগুলো ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে কী খাবেন, কী খাবেন না?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাবার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খেতে পারবেন যেসব খাবার
- কম গ্লাইসেমিক ফল: আপেল, পেয়ারা, কমলা, জাম্বুরা।
- শাকসবজি: পালং শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, শসা, টমেটো।
- প্রোটিন: মাছ, মুরগি (চামড়া ছাড়া), ডিম, ডাল।
- শস্য: লাল চাল, আটা, ওটস।
- বাদাম ও বীজ: অল্প পরিমাণে বাদাম এবং বীজ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সরবরাহ করে।
পরিহার করতে হবে যেসব খাবার
- মিষ্টি ও চিনি: চিনি, গুড়, মিষ্টি পানীয়, মিষ্টি ফল (যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু)।
- সফট ড্রিংকস ও জুস: এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে।
- ভাজাভুজি ও ফাস্ট ফুড: এগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং উচ্চ ক্যালোরি থাকে।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: যেমন বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি।
- উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবার: সাদা চাল, সাদা আটা, আলু, মিষ্টি কুমড়া।
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
- প্রতিদিন খালি পেটে ১ চামচ মেথি গুঁড়া
- তেতুল ও করলার রস
- দারুচিনি ও এলাচের চা
- পর্যাপ্ত পানি পান
মানসিক স্বাস্থ্য ও ডায়াবেটিস
- অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মানসিক চাপ, অবসাদ ও হতাশা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক প্রশান্তি রক্ষা করাই এই রোগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়।
অল্প বয়সে ডায়াবেটিস হলে করণীয়
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- খেলাধুলা ও দৈহিক পরিশ্রম করুন
- দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন
- আত্মবিশ্বাস হারাবেন না
- পড়ুন: আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ৭টি কার্যকর কৌশল
ডায়াবেটিস ২০ হলে করণীয়
- যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ২০ মিমি/লিটারে পৌঁছে যায় (যা অত্যন্ত উচ্চ মাত্রা হিসেবে বিবেচিত), তা গুরুতর হাইপারগ্লাইসেমিয়া নির্দেশ করে।
- এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- প্রচুর পানি পান করতে হবে।
- শরীরকে বিশ্রামে রাখতে হবে।
- নির্ধারিত ওষুধ বা ইনসুলিন সময়মতো গ্রহণ করতে হবে।
- কখনোই অবহেলা করা যাবে না, কারণ এটি কোমা বা কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে কি খেতে হয়
- ডায়াবেটিস হলে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খেতে হয়, যেমন:
- লাল চাল
- আটার রুটি
- শাকসবজি
- আপেল
- পেয়ারা
- ওটস
- বাদাম
- মাছ ও ডাল
- চিনি ও মিষ্টিজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হয়।
ডায়াবেটিস নীল হলে করণীয়
- “ডায়াবেটিস নীল” বলতে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে যাওয়াকে বোঝালে, তা হাইপোগ্লাইসেমিয়া।
- এ অবস্থায় দ্রুত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে হয়, যেমন:
- গ্লুকোজ
- চকলেট
- মিষ্টি ফল
- প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।
ডায়াবেটিস হলে কিভাবে বুঝবেন
- ডায়াবেটিস হলে ঘন ঘন প্রস্রাব।
- অতিরিক্ত পিপাসা।
- ক্লান্তি।
- ওজন হ্রাস।
- ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া।
- চোখে ঝাপসা দেখার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
- নিশ্চিত হতে রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হয়।
ডায়াবেটিস হাই হলে করণীয়
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যখন নিয়মিত ১১ mmol/L বা তার বেশি থাকে, তখন এটিকে "হাই" বা উচ্চ ডায়াবেটিস বলা হয়।
- এ সময় চিনি ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার এড়ানো জরুরি।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে।
- নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
অতিরিক্ত ডায়াবেটিস হলে করণীয়
- অতিরিক্ত ডায়াবেটিস অর্থাৎ যখন রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন এটি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- এক্ষেত্রে দ্রুত মেডিকেল পরামর্শ নিতে হবে।
- ইনসুলিন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।
- রোগীকে বিশ্রাম দিতে হবে।
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে — যেমন উচ্চ ফাইবার, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
ডায়াবেটিস হলে কি করতে হবে
- ডায়াবেটিস ধরা পড়লে প্রথমেই সঠিক ডায়েট প্ল্যান তৈরি করে নিতে হবে।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, ব্যায়াম ও ওষুধ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়মিত মনিটর করতে হবে।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে চোখ, কিডনি ও নার্ভের অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
- এছাড়া মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা রিল্যাক্সেশন টেকনিক অনুসরণ করা যেতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- ব্লাড সুগার ২০-এর উপরে থাকলে (মিলি মোলে/লিটার)।
- অল্প বয়সে ডায়াবেটিসের উপসর্গ দেখা দিলে.
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের সন্দেহ হলে.
- ওষুধ বা ইনসুলিন নেওয়ার পরও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে.
- ডায়াবেটিসের কারণে কোনো জটিলতা দেখা দিলে (যেমন চোখে ঝাপসা দেখা, পায়ে ঘা)।
FAQ (Question-based Keywords ইনকর্পোরেট করে)
প্রশ্ন: ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে কি?
উত্তর: সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিস নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। টাইপ-২ ডায়াবেটিস জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে রোগের অগ্রগতি থামানো বা এমনকি বিপরীত দিকেও চালিত করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না?
উত্তর: ডায়াবেটিস হলে উচ্চ শর্করাযুক্ত ফল যেমন কাঁচা আম, কলা, কাঁঠাল, লিচু, খেজুর এবং আঙুর পরিহার করা উচিত অথবা সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। কম শর্করাযুক্ত ফল যেমন আপেল, পেয়ারা, কমলা, জাম্বুরা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন: দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কী?
উত্তর: দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কম শর্করাযুক্ত সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করা জরুরি। কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন মেথি ও করলার রস সহায়ক হতে পারে, তবে এগুলো চিকিৎসার বিকল্প নয়।
প্রশ্ন: ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না?
উত্তর: ডায়াবেটিস হলে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের সবজি যেমন আলু, মিষ্টি কুমড়া এবং গাজর (রান্না করা) কম পরিমাণে খাওয়া উচিত। এর পরিবর্তে সবুজ শাকসবজি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, টমেটো ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খাওয়া উপকারী।
উপসংহার
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব। ডায়াবেটিস হলে করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকা, নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলাই এই রোগ নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সামান্য সচেতনতা এবং পদক্ষেপই ডায়াবেটিসের জটিলতা এড়াতে এবং একটি উন্নত জীবন যাপন করতে সহায়ক হতে পারে।