![]() |
জীবনধারার পরিবর্তন এবং কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতির মাধ্যমে ঔষধ ছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব |
ডায়াবেটিস বর্তমানে একটি ভয়ংকর নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত এবং বাংলাদেশেও এর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অনেকেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজীবন ঔষধ নির্ভর থাকেন। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে, জীবনধারার পরিবর্তন এবং কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতির মাধ্যমে ঔষধ ছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই প্রবন্ধে আমরা জানব ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়, ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক কৌশল, সঠিক খাবার ও ব্যায়াম, এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর।
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জীবনধারার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঔষধের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে প্রাকৃতিক উপায়েও ডায়াবেটিস কমানো সম্ভব। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপায় আলোচনা করা হলো:
১. নিয়মিত ব্লাড সুগার চেকআপ করুন
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বুঝতে হলে নিয়মিত ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS) ও পোস্টপ্রান্ডিয়াল ব্লাড সুগার (PPBS) পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এই পরীক্ষাগুলো আপনাকে আপনার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেবে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন খাবার বা অভ্যাসে সুগার বাড়ছে বা কমছে। এর ফলে আপনি আপনার খাদ্যতালিকা এবং জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারবেন। ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে এটি প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল? খালি পেটে সুগার লেভেল নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ গাইড
![]() |
সকালে খালি পেটে হাঁটা করলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে |
২. প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০–৬০ মিনিট হাঁটা টাইপ-২ ডায়াবেটিস কমানোর ব্যায়াম হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। সকালে খালি পেটে হাঁটা করলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে এবং রক্তে চিনির মাত্রা দ্রুত কমে। এটি শরীরকে সক্রিয় রাখে এবং ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। হাঁটার পাশাপাশি অন্যান্য হালকা ব্যায়াম যেমন জগিং, সাইক্লিং বা সাঁতারও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩. পুষ্টিকর ও কম কার্ব খাবার গ্রহণ করুন
সাদা ভাত, ময়দা, মিষ্টি জাতীয় খাবার রক্তে চিনি বাড়ায়। এর পরিবর্তে আঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি, ডাল, বাদাম, ও ওটস জাতীয় খাবার খেতে হবে। ডায়াবেটিস কমানোর খাবার তালিকায় থাকতে পারে করলা, জাম, মেথি ইত্যাদি। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেমন ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া এবং পূর্ণ শস্যের রুটি রক্তে চিনির মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হজমে সাহায্য করে এবং রক্তে গ্লুকোজের শোষণ ধীর করে। প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপমুক্ত থাকা
ঘুমের অভাবে কর্টিসল হরমোন বাড়ে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমায়। মানসিক চাপও রক্তে সুগার বৃদ্ধির জন্য দায়ী। প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম এবং মেডিটেশন বা প্রার্থনার মাধ্যমে চাপ কমানো দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। যোগা, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, এবং প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য পড়ুন,
মনের প্রশান্তির জন্য কিছু সহজ অভ্যাস
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও জীবনধারা পরিবর্তন
স্থূলতা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মূল কারণগুলোর একটি। অতিরিক্ত ওজন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়, যার ফলে শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস, কাজের ধরন এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অবলম্বন করা ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়গুলির মধ্যে অন্যতম। এটি কেবল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
৬. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
ধূমপান এবং মদ্যপান উভয়ই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায় এবং রক্তে সুগার বাড়ায়। এই দুটি অভ্যাস ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস কমাতে ধূমপান ও অ্যালকোহল একেবারে বন্ধ করা উচিত। এটি কেবল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেই নয়, বরং হৃদরোগ এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
![]() |
পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে সতেজ রাখে এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে |
৭. প্রচুর পানি পান করুন ও হাইড্রেটেড থাকুন
সঠিক পরিমাণে পানি খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় এবং সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে সতেজ রাখে এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। হাইড্রেটেড থাকা কেবল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং সামগ্রিক ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে এবং শরীরের কার্যকারিতা উন্নত করে।
ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
বাড়িতেই কিছু সহজ পদ্ধতিতে আপনি ডায়াবেটিস কমাতে পারেন। এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
- মেথি দানা: মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। রোজ সকালে খালি পেটে ভেজানো মেথির পানি পান করুন। মেথি ফাইবারে সমৃদ্ধ এবং গ্লুকোজ হজম প্রক্রিয়া ধীর করে।
- জামের বিচি: জামের বিচি গুঁড়ো করে প্রতিদিন আধা চা চামচ করে খাওয়া যেতে পারে। জাম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে।
- করলার রস: রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে করলার রস অত্যন্ত উপকারী। করলায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ইনসুলিনের মতো কাজ করে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। নিয়মিত করলার রস পান করা ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে পরিচিত।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস হলে ঔষধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হয়:
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম: হাঁটা, সাঁতার বা যোগার মতো হালকা ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ব্যায়াম শুরু করতে হবে।
- কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) খাবার: উচ্চ GI খাবার এড়িয়ে কম GI খাবার গ্রহণ করুন। এতে রক্তে চিনির মাত্রা হঠাৎ করে বাড়বে না। শাকসবজি, ফলমূল এবং পূর্ণ শস্য খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মনিটরিং: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক।
খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
খালি পেটে ডায়াবেটিস কমাতে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (IF) সহায়ক হতে পারে। এতে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে এবং দেহে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস মেথির পানি পান করা বা হালকা ব্যায়াম করাও ফাস্টিং সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। রাতে হালকা খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ঘুমও ফাস্টিং সুগার কমাতে সাহায্য করে।
তাড়াতাড়ি বা তাৎক্ষণিক ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
যদি হঠাৎ ব্লাড সুগার বেড়ে যায়, নিচের পদক্ষেপগুলি নিন:
- প্রচুর পানি পান করুন: পানি পান করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।
- ১৫-২০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন: শারীরিক কার্যকলাপ রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
- করলার রস বা জামের বিচি গ্রহণ করুন: এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে।
- কম GI খাবার গ্রহণ করুন: উচ্চ GI খাবার পরিহার করুন এবং শাকসবজি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় (দীর্ঘমেয়াদী)
দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:
- প্রতিদিন ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ: ওটস, বার্লি, শাকসবজি, ফল এবং ডাল জাতীয় খাবার ফাইবার সমৃদ্ধ। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- বাদাম, অলিভ অয়েল, মাশরুম ব্যবহার: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- রিফাইনড সুগার সম্পূর্ণ পরিহার: চিনি, মিষ্টি, সফট ড্রিংকস এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার সম্পূর্ণরূপে বর্জন করুন।
ডায়াবেটিস কমানোর খাবার
সঠিক খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ডায়াবেটিস কমানোর খাবার তালিকায় থাকতে পারে:
- করলা, মেথি, জাম: এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর।
- ওটস, বার্লি, শাকসবজি: এগুলি ফাইবার এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ।
- ব্রাউন রাইস ও লো GI ফল: সাদা ভাতের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস এবং আপেল, পেয়ারা, কমলালেবুর মতো লো GI ফল গ্রহণ করুন।
ডায়াবেটিস থেকে বাচতে পড়ুন ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা: সুস্থ থাকতে যা এড়িয়ে চলবেন
![]() |
শারীরিক কার্যকলাপ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য। |
যখন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করবে, তখন কিছু লক্ষণ দেখা দেবে:
- অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রবণতা কমে যাওয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এলে কিডনির উপর চাপ কমে এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা কমে।
- শরীরের ক্লান্তি হ্রাস পাওয়া: রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল হলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং ক্লান্তি কমে।
- রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল হওয়া: নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করলে দেখা যাবে আপনার ব্লাড সুগার স্বাভাবিক মাত্রায় রয়েছে।
- ক্ষত দ্রুত শুকানো: উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে ক্ষত শুকাতে দেরি হয়। মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এলে ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়।
- দৃষ্টিশক্তির উন্নতি: ধোঁয়াটে দৃষ্টিশক্তি কমে আসে এবং দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হয়।
ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কমানোর উপায় কী?
যদি হঠাৎ ব্লাড সুগার বেড়ে যায়, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিন:
- দ্রুত ১ ঘণ্টা হাঁটা: হালকা থেকে মাঝারি গতির হাঁটা রক্তে শর্করার মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে কমাতে সাহায্য করে।
- প্রচুর পানি খাওয়া: পানি পান করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বেরিয়ে যায়।
- কম GI খাবার খাওয়া: মিষ্টি ও উচ্চ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার পরিহার করুন এবং শাকসবজি, প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
- ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা: পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানো রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: যদি সুগার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং উপরের পদ্ধতিগুলো কাজ না করে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ব্লাড সুগার টেস্ট করিয়ে নিতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে:
- অতিরিক্ত পিপাসা ও প্রস্রাব: এটি উচ্চ রক্তে শর্করার একটি সাধারণ লক্ষণ।
- হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য চর্বি পোড়াতে শুরু করে, ফলে ওজন কমে যায়।
- ধোঁয়াটে দৃষ্টিশক্তি: রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা চোখের লেন্সকে প্রভাবিত করতে পারে।
- ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া: উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।
- ঘন ঘন সংক্রমণ: মূত্রনালীর সংক্রমণ, ত্বকের সংক্রমণ বা ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে।
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা: শরীর পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে না পারায় দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হয়।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে পড়ে দেখুন
ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী কী? জানুন বিস্তারিত গাইড ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস কমানোর উপযুক্ত ব্যায়াম
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত ব্যায়াম ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ইয়োগা: ইয়োগা শুধুমাত্র শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় না, এটি মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে, যা ইনসুলিন প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। 'সুগার আসন' এবং 'প্রাণায়াম' ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী।
- সাঁতার: সাঁতার একটি সম্পূর্ণ শরীরের ব্যায়াম যা শরীরের সব পেশি একসাথে কাজ করায়। এটি ক্যালরি পোড়াতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
- সাইক্লিং: প্রতিদিন ৩০ মিনিট সাইক্লিং করলে উল্লেখযোগ্যভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে আসে। এটি একটি কার্যকর কার্ডিও ব্যায়াম।
- ঘরোয়া ব্যায়াম: স্কোয়াট, স্টেপ-আপ, জাম্পিং জ্যাকস, ছাদে হাঁটা, দড়ি লাফ ইত্যাদি বাড়িতেই করা যেতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো শরীরের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
প্রশ্নোত্তর: পাঠকের সাধারণ জিজ্ঞাসা
ডায়াবেটিস নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
১. ডায়াবেটিস কমানোর সহজ উপায় কী?
নিয়মিত হাঁটা, কম কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপমুক্ত থাকা – এই অভ্যাসগুলোই সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর। এগুলো ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে বিবেচিত।
২. দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঔষধ কী? (প্রাকৃতিক বিকল্প)
করলার রস, মেথি দানা ও জামের বিচি – এগুলো প্রাকৃতিক ঔষধ হিসাবে কাজ করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমাতে সহায়ক।
৩. তাৎক্ষণিক ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কী?
শরীরচর্চা যেমন দ্রুত হাঁটা, প্রচুর পানি পান, করলার রস গ্রহণ এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা তাৎক্ষণিক ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
৪. হঠাৎ ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে করণীয় কী?
হাঁটুন, জল খান, শাকসবজি ও প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। যদি মাত্রা অস্বাভাবিক থাকে, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৫. ফাস্টিং ব্লাড সুগার কমানোর উপায় কী?
রাতে হালকা খাবার খান, সকালে খালি পেটে হাঁটুন, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন এবং স্ট্রেস কমান। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংও সহায়ক হতে পারে।
উপসংহার
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব যদি আপনি সঠিকভাবে জীবনধারা পরিবর্তন করেন। খাবার, ব্যায়াম, ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নিয়মিত নজর রাখলে আপনি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন। ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক রোগ হলেও সঠিক জীবনযাপন এবং প্রাকৃতিক উপায়ে এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিজেকে সুস্থ রাখতে উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন এবং কোনো পরিবর্তন করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতা আপনাকে ডায়াবেটিস মুক্ত জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।