![]() |
সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গেছে, আগামী ২০ বছরে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা কোটিতে পৌঁছাবে, যা সত্যিই আমাদের সবার জন্য চিন্তার কারণ। |
বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক ব্যাধি হিসেবে পরিণত হয়েছে, যা দিনে দিনে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো- খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের ধরন ও মানসিক নানান চাপ। সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গেছে, আগামী ২০ বছরে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা কোটিতে পৌঁছাবে, যা সত্যিই আমাদের সবার জন্য চিন্তার কারণ। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আর তাই আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে ডায়াবেটিস। শুধু বয়স্করাই নন, আজকাল তরুণরাও এই রোগের শিকার হচ্ছেন, আর এর ফলে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। তবে কিছু নিয়মিত অভ্যাস এবং জীবনধারায় পরিবর্তন এনে এই রোগ থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা সম্ভব। চলুন, জেনে নিই ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো কী কী।
ডায়াবেটিস কী
ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেখানে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন এক ধরণের হরমোন যা রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন ইনসুলিন কাজ করতে পারে না, তখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে, যেমন—হৃদপিণ্ড, কিডনি, চোখ এবং স্নায়ু। এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ক্লান্তি এবং ওজন হ্রাস। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
ডায়াবেটিস: প্রকারভেদ ও লক্ষণ
ডায়াবেটিস মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
টাইপ ১ ডায়াবেটিস
এই ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন একদমই উৎপন্ন হয় না।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস
এখানে শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না, অথবা ইনসুলিন উৎপন্ন হলেও তা সঠিকভাবে কাজ করে না।
ডায়াবেটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখলে আমরা সহজেই সতর্ক হতে পারি। যেমন:
- ক্লান্তি
- ওজন কমে যাওয়া
- অনেক বেশি তেষ্টা
- ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা
- কাটা স্থান বা ক্ষত শুকাতে সময় লাগা
- ঝাপসা দৃষ্টি
এই লক্ষণগুলো দেখলে দেরি না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায়
জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন
নিউইয়র্কের ওয়েল কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা কীভাবে খাবার খাচ্ছি, তার ওপরও রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটা নির্ভর করে। গবেষকদের মতে, কার্বোহাইড্রেট প্রথমে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ যতটা বাড়ে, তার চেয়ে আগে শাক-সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে শর্করার মাত্রা অনেকটাই কম থাকে। প্রোটিন ও শাক-সবজি প্রথমে খেলে আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও দু'ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যথাক্রমে ২৯, ৩৭ ও ১৭ শতাংশ।
আমাদের দৈনন্দিন অনিয়মিত জীবনযাপন, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড, চিনি, কার্বোহাইড্রেট, মদ পান এবং ধূমপান—এগুলো সবই কিন্তু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে জীবনযাত্রায় রাশ টানতে হবে এবং খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হবে জরুরি পরিবর্তন। তাই নিয়মিত ঘুম, সময়মতো খাবার গ্রহণ, শরীরচর্চা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা — এই অভ্যাসগুলো ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকার জন্য অপরিহার্য।
মনের প্রশান্তির জন্য কিছু সহজ অভ্যাস
খাদ্যাভ্যাসে আনুন ইতিবাচক পরিবর্তন
সালাদ খান
প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় তাজা শাকসবজি, বিশেষ করে সালাদ অন্তর্ভুক্ত করুন। সালাদ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হজমে সহায়তা করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শসা, গাজর, টমেটো, বাঁধাকপি, লেটুসপাতা – এই সবজিগুলো সালাদে ব্যবহার করতে পারেন।
পূর্ণ শস্যজাতীয় খাদ্য খান
সাদা চাল বা ময়দা বাদ দিয়ে পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার যেমন – ব্রাউন রাইস, ওটস, বার্লি, গোটা গমের রুটি ইত্যাদি খান। এগুলো ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে দেয় না।
কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে সতর্কতা
কার্বোহাইড্রেট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি পরিমিত ও বুদ্ধিমত্তার সাথে গ্রহণ করা উচিত। দ্রুত হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেট যেমন চিনিযুক্ত খাবার, সাদা পাউরুটি ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। এর বদলে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার বেছে নিন।
মিষ্টি পরিহার করুন
চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগীর প্রধান শত্রু। কেক, কোল্ড ড্রিংকস, মিষ্টি, চকলেট ইত্যাদি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। এর পরিবর্তে ফলের প্রাকৃতিক চিনি গ্রহণ করতে পারেন, তবে সেটিও সীমিত পরিমাণে।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা: সুস্থ থাকতে যা এড়িয়ে চলবেন
![]() |
শরীরচর্চাসহ নানান অভ্যাসের মাধ্যমে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করতে হবে। |
নিয়মিত শরীরচর্চা ও অন্যান্য অভ্যাস
প্রচুর হাঁটাহাঁটি করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে আসে। সকালে বা সন্ধ্যায় নিয়মিত হাঁটলে ওজন কমে এবং ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আর্দ্র থাকুন
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পানি পান করুন যাতে গ্লুকোজ সহজে রক্ত থেকে শরীরের কোষে পৌঁছাতে পারে এবং কিডনি সুস্থ থাকে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখুন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ওজন বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাবার এবং ক্যালরি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
মানসিক ও সুস্থ জীবনধারার অভ্যাস
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন
মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায়। নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, বই পড়া কিংবা প্রিয় কোনো কাজের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান শুধু হৃদরোগই নয়, ডায়াবেটিসের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান ছাড়লে রক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়।
![]() |
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক করা অত্যন্ত জরুরি |
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
রক্তে চিনির মাত্রার ওপর নজর রাখুন
নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক করা অত্যন্ত জরুরি। এতে আপনি জানতে পারবেন কোন খাবার বা অভ্যাসে আপনার রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যাচ্ছে এবং তদনুযায়ী আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করতে পারবেন।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল? খালি পেটে সুগার লেভেল নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ গাইড
আয়ুর্বেদে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়
আয়ুর্বেদ শুধু রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় নয়, বরং জটিলতা থেকেও রক্ষা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিছু পরিচিত ভেষজ নিচে দেওয়া হলো:
- মেথি: এর তেতো স্বাদ সত্ত্বেও এটি চিনি, স্থূলতা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর। এক চামচ মেথি গুঁড়ো হালকা গরম জলের সাথে খালি পেটে বা ঘুমানোর আগে খাওয়া যেতে পারে। অথবা, মেথি বীজ সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে।
- কালো মরিচ: এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চমৎকার কাজ করে। এক চামচ কালো মরিচের গুঁড়ো হলুদের সাথে মিশিয়ে রাতের খাবারের এক ঘন্টা আগে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- দারুচিনি: এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর পাশাপাশি কোলেস্টেরল ও চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। এক চামচ দারুচিনি, আধা চামচ মেথি গুঁড়ো এবং হলুদ মিশিয়ে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া, চায়ে দারুচিনি যোগ করেও পান করতে পারেন।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে কী খাবেন?
ডায়াবেটিস রোগীরা কিছু নির্দিষ্ট শস্য, ফল এবং সবজি খেতে পারেন, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
- শস্যদানা: আস্ত ভাত, দই, যব, সুজি, গম ইত্যাদি।
- ডাল: ছোলা, কাবুলি ছোলা, অড়হর ডাল, ছোলার ডাল ইত্যাদি।
- ফল: কমলা, চেরি, নাশপাতি, আপেল, কিউই ইত্যাদি।
- শাকসবজি: পালং শাক, কাঁচা কলা, বিনস, কাঁচা পেঁপে, ক্যাপসিকাম, করলা ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিছু সহজ ঘরোয়া প্রতিকার
ঘরে বসেই কিছু সহজ উপায়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব:
- নিম: নিম পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে দিনে দুবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- করলা: নিয়মিত করলার রস পান করলে বা সবজি হিসেবে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- জাম: কালো লবণের সাথে জাম খেতে পারেন। এছাড়া, জামের বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
- আদা: আদার ক্বাথ তৈরি করে দিনে দুবার পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- মেথি: মেথি শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রেখে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দুই চা চামচ মেথি বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই জল ও বীজ খেতে পারেন।
এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে যেকোনো নতুন প্রতিকার শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায়
সঠিক জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক উপাদানও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে দারুণ সহায়ক। দেখে নিন কী কী খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে:
পেঁয়াজ
ব্রিটিশ ওয়েবসাইট এক্সপ্রেসের মতে, পেঁয়াজ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি। গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজের নির্যাস রক্তে শর্করার পরিমাণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত মেটফরমিন ওষুধের মতো কাজ করে।
নয়ন তারা উদ্ভিদ
নয়ন তারা ফুলের গুরুত্ব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অপরিসীম। শুকনো ফুল ও মূল ১ গ্রাম অথবা কাঁচা হলে ২ গ্রাম, এক কাপ পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে ফুটিয়ে অর্ধেক করে নিন। এই পানি অর্ধেক করে সকাল ও রাতে পান করুন। দশ দিন ব্যবহারের পর রক্ত পরীক্ষা করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পনির ফুল
পনির ফুল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একটি অব্যর্থ উপাদান। এটি অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলোকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। রাতে ১০-১২টি ফুল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করুন।
দারচিনি
দারচিনি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য খুবই উপকারী। এটি ইনসুলিন উৎপাদনকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্তের সুগার লেভেল কমায়। দারচিনির গুঁড়া চা, পানি বা অন্য পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেলে থাকা ফাইটোস্ট্যারলস নামক উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হলুদ, তেজপাতা ও অ্যালোভেরা জেল জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন।
আম পাতা
৩-৪টি আম পাতা জলে ফুটিয়ে প্রতিদিন সকালে এই মিশ্রণটি পান করলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। শুকনো আম পাতা গুঁড়ো করেও দিনে দুবার আধা চামচ করে খেতে পারেন।
চর্বিযুক্ত মাছ
স্যালমন, সার্ডিন, হেরিং-এর মতো চর্বিযুক্ত মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ডুমুর
ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমুর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধে উপকারী।
শরীরচর্চা: ওষুধ নয়, প্রাকৃতিক নিরাময়
শরীরচর্চা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক নিরাময়। যখন একজন ডায়াবেটিসের রোগী হাঁটা বা ব্যায়াম শুরু করেন, তখন তার শরীরের ইনসুলিনের কার্যকারিতা বেড়ে যায় এবং কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এর ফলে ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন অনেকটাই কমে যেতে পারে। শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর না করে, প্রাকৃতিক উপায়েও যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা এই তথ্যগুলো থেকে স্পষ্ট।
উপসংহার
ডায়াবেটিস কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারেন। উপরোক্ত অভ্যাসগুলো নিয়মিত পালন করলে আপনি ডায়াবেটিস থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকতে পারবেন এবং একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।
FAQ: প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: ডায়াবেটিস কি সম্পূর্ণভাবে ভালো হওয়া সম্ভব?
উত্তর: টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখা সম্ভব। যদিও একে "নিরাময়" বলা ঠিক নয়, তবে খাদ্য, ব্যায়াম ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকেই ওষুধ ছাড়াই রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন।
প্রশ্ন ২: ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকর ঘরোয়া উপায় কী?
উত্তর: করলা, মেথি, অ্যালোভেরা, আমপাতা, নয়ন তারা, ও দারচিনির মত প্রাকৃতিক উপাদান নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। তবে এগুলোর ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৩: ওজন কমানো কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে?
উত্তর: হ্যাঁ, ওজন কমানো টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত ওজন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
প্রশ্ন ৪: প্রতিদিন ব্যায়াম করলে কি ডায়াবেটিস কমে যায়?
উত্তর: নিয়মিত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৫: কোন খাবারগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত?
উত্তর: মিষ্টি জাতীয় খাবার, সাদা চাল, চিনি, সফট ড্রিংকস, বেকড ফুডস এবং উচ্চ কার্বযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
প্রশ্ন ৬: কি ধরনের খাদ্য ডায়াবেটিস মুক্ত জীবনের জন্য উপকারী?
উত্তর: আঁশযুক্ত খাবার, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বিশিষ্ট শাকসবজি, বাদাম, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ, দারচিনি ও করলা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
প্রশ্ন ৭: ডায়াবেটিস মুক্ত থাকতে মানসিক চাপ কতটা প্রভাব ফেলে?
উত্তর: অতিরিক্ত মানসিক চাপ কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই মেডিটেশন, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৮: ঔষধ ছাড়াই কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?
উত্তর: প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
প্রশ্ন ৯: ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কি আগেভাগেই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আগেভাগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
প্রশ্ন ১০: কখন একজন ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত?
উত্তর: রক্তে চিনি অনিয়ন্ত্রিত থাকলে, হঠাৎ ওজন কমে গেলে, অতিরিক্ত পিপাসা বা প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে গেলে, চোখে ঝাপসা দেখলে বা পায়ে ব্যথা-স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।